প্রকাশিত: ০৩/০৩/২০১৮ ৭:২৫ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৫:৫৪ এএম
আরসার শীর্ষ নেতা

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::

আরসার শীর্ষ নেতা

নিজেদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রয়োজনে বাংলাদেশের তমব্রু সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে বলে করেছে দাবি করেছে মিয়ানমার। আর নিরাপত্তার অযুহাত হিসেবে দেশটি রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকার সলভেশন আর্মি বা আরসাকে মোকাবেলার কথা বলছে।

শুক্রবার বিকালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুনধুম পয়েন্টে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের এক পতাকা বৈঠকে এমনই দাবি করেছে মিয়ানমারের বিজিপি।

এই বৈঠক ছাড়াও আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আরসার বিষয়টি তুলে ধরেছে।

প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী পাতাকা বৈঠকে বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।

মিয়ানমারের পক্ষে সেদেশের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ব্যাটালিয়ন কমান্ডার সুচায়ে হু তাদের সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

বৈঠক শেষে কমান্ডার মঞ্জরুল হাসান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিজেদের (মিয়ানমার) নিরাপত্তায় সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন সময়ে সেনা বা বিজিপি মোতায়েন করে বলে তারা (মিয়ানমার) দাবি করেছে। এর অংশ হিসেবে (তারা) ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে টহলও দেয়। মিয়ানমার দাবি করেছে, এটি সম্পূর্ণ মিয়ানমারের নিজস্ব নিরাপত্তার প্রয়োজনে করা হয়েছে।’

এই বিজিবি কর্মকর্তা আরও বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমারের দিক থেকে ফাঁকা গুলি ছোড়ার বিষয়ে বৈঠকে বিজিবির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়। তবে বিজিপি ফাঁকা গুলি ছোড়ার কথা অস্বীকার করলেও শূন্য রেখায় আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সীমান্তে হঠাৎ করেই অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে মিয়ানমার। সামরিক পিকআপ, ট্রাক ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিপুল সংখ্যক বিজিপি সদস্য শূন্য রেখা থেকে প্রায় দেড়শ গজ ভেতরে অবস্থান নেয়। ফলে সেখানে আটকে পড়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লিউন উকে ডেকে জোরালো প্রতিবাদ জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যে শুক্রবার এই পতাকা বৈঠক করল দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

‘আরসা ঠেকাতে অতিরিক্ত সেনা’

এদিকে মিয়ানমারের সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই বাংলাদেশের সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা সমাবেশ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির মুখপাত্র জাও হতে। শুক্রবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য নয়, আরসার নতুন তৎপরতা সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পরই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’

জ হতে এএফপির কাছে বলেন, ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) তৎপরতা সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গেছে। আর একারণেই সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা শক্তি বাড়ানো হয়েছে।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কদিন ধরেই বাংলাদেশ সীমান্তের শূন্যরেখায় নিজেদের অতিরিক্ত সেনা বাড়িয়েছে মিয়ানমার। এ শূন্যরেখা ঘিরে আনুমানিক সাত হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। শূন্য রেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশের দিকে সরে যায়, তার জন্য মিয়ানমারের সেনারা ভয় ভীতি দেখাচ্ছে এবং তারা মাইকিং করে রোহিঙ্গাদের শূন্যরেখা থেকে চলে যেতে বলেছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনী নৃশংসতা শুরু করলে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে সেখানকার স্থানীয় রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। গত জানুয়ারি মাসে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হলেও এখনও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।

জাতিসংঘ ও তার সহযোগি সংস্থাগুলি বলে আসছে, রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিতাড়ন করতে মিয়ানমার পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর দমন পীড়ন চালাচ্ছে। সংস্থাটি রোহিঙ্গা নিধনের ঘটনাকে কোনও জাতি নির্মূলেরপাঠ্য পুস্তকীয় উদাহারণ’বলেও বর্ণনা করেছে।

সীমান্তে এভাবে মিয়ানমারের অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আরও দীর্ঘায়িত করতে পারে বলে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

পাঠকের মতামত